ডেবিট কার্ড (ব্যাংক কার্ড অথবা চেক কার্ড হিসেবে পরিচিত) হল এমন একটি প্লাস্টিক কার্ড, যেটি কেনাকাটার সময় ক্যাশ টাকার বিকল্প মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কার্যত, এই কার্ডকে ইলেকট্রনিক চেক বলা চলে। কারণ এই কার্ড দিয়ে দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করলে, সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন দেখানো হয়। ডেবিট কার্ড সাধারণত ক্যাশ অথবা ব্যক্তিগত চেক এর মত কাজ করে।
ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডের পার্থক্য কী?
ক্রেডিট কার্ড হল এমন একটি প্লাস্টিক কার্ড, যে কার্ডের বিপরীতে ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহকদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঋণ মঞ্জুর করে থাকে এবং গ্রাহক সেই মঞ্জুরকৃত ঋণের টাকা তার চাহিদা মত যে কোন সময় পণ্য এবং সেবা ক্রয় করতে পারে অথবা ক্যাশ টাকা উত্তোলন করতে পারে। এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই টাকা আবার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।
ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডের পার্থক্য হল-
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা ক্রয় করার জন্য গ্রাহককে সাথে সাথেই টাকা প্রদান করতে হয়। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচকৃত টাকা গ্রাহককে সাথে সাথে প্রদান করতে হয় না।
ডেবিট কার্ডকে ক্যাশ কার্ড বলা চলে। অপরপক্ষ, ক্রেডিট কার্ডকে এক কথায় লোন কার্ড বলা চলে।
ডেবিট কার্ডের সাথে লিংক করা একাউন্টে যে পরিমাণ ব্যালেন্স থাকে, গ্রাহক শুধু সেই টাকা ব্যবহার করতে পারেন। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ টাকা গ্রাহকের জন্য ঋণ মঞ্জুর করে থাকে, গ্রাহক শুধু সেই টাকা ব্যবহার করতে পারেন।
ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে একাউন্টে শুধু নিজের জমা” করা টাকা ব্যবহার করা যায়। অপরপক্ষে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে ক্রেডিট লিমিট দিয়ে থাকে, সেই টাকা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ব্যবহার করা যায়।
ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে গ্রাহকের একাউন্টে টাকা জমা থাকলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গ্রাহককে সুদ বা মুনাফা প্রদান করা হয় । অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডের আউটস্ট্যান্ডিং ব্যালেন্স থাকলে তার বিপরীতে গ্রাহক কর্তৃক ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সুদ প্রদান করতে হয়।
ডেবিট কার্ডে কোন একোয়াটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট (ইএমআই) সুবিধা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডে একোয়াটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট (ইএমআই) সুবিধা পাওয়া যায়।
ডেবিট কার্ডে কেনাকাটার পর পুনরায় পেমেন্ট করার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা পর পুনরায় পেমেন্ট করতে হয়, সেটা গ্রাহক পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারে অথবা সর্বনিম্ম বিল পরিশোধ করতে পারে।
ডেবিট কার্ডধারীকে কোন প্রসেসিং ফি প্রদান করতে হয় না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহককে জয়নিং, প্রসেসিং ফি, লেট পেমেন্ট ফি, বার্ষিক ফি প্রদান করতে হয়।
ডেবিট কার্ডের গ্রাহকের কাছে বিল পেপার হিসেবে কোন স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয় না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের কাছে স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয়। যেখানে লেনদেনের বিস্তারিত বর্ণনা থাকে, বর্তমানে ব্যালান্স কত আছে, মিনিমাম কত টাকা প্রদান করতে হবে এবং বিল প্রদান করার শেষ তারিখ উল্লেখ করা থাকে।
ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডের পার্থক্য কী?
সেভিংস/কারেন্ট/এসটিডি অ্যাকাউন্টধারী যেকোনো গ্রাহক ডেবিট কার্ড নিতে পারে। অপরপক্ষে, ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করার জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন, গ্রাহকের কত টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণ মঞ্জুর করা আছে, নিয়মিত ব্যাংকের লেনদেন করেন কিনা ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার পরে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হয়।
ডেবিট কার্ডের বিপরীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্স্যুরেন্স সুবিধা প্রদান করে না। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ইন্স্যুরেন্স সুবিধা প্রদান করে।’
ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীকে কোন প্রকার সুদ বা মুনাফা দিতে হয় না। কারণ, ডেবিট কার্ড দিয়ে গ্রাহক নিজের টাকা নিজেই উত্তোলন করে থাকেন। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের বিল প্রদান না করলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সুদ প্রদান করতে হয়।
ব্যাংকের হিসাবধারী যেকোনো গ্রাহককে ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ড সহজে এবং যে কোন গ্রহকে প্রদান করা হয় না।
ডেবিট কার্ডের জন্য গ্রাহকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) যাচাই করা হয় না। বিপরীতে, ক্রেডিট কার্ডের জন্য গ্রাহকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) যাচাই করা হয়।
ডেবিট কার্ড গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে সাথে সংযুক্ত করা থাকে। বিপরীতে, ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের একাউন্টের সাথে সংযুক্ত করা থাকে না।
ডেবিট কার্ডে সাধারণত একটি কারেন্সি (বিডিটি/বাংলাদেশি টাকা) প্রদান করা হয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড মাল্টি কারেন্সির হয়ে থাকে।