ওয়াদি আল জ্বীন বা জ্বীনের পাহাড়ের রহস্য।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
ওয়াদি আল জ্বীন বা জ্বীনের পাহাড়ের রহস্য।

ওয়াদি আল জ্বীন বা জ্বীনের পাহাড়ের রহস্য।

ঘুরতে গিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে বসে আছেন, অবাক কান্ড গাড়ি চলছে ! লক্ষ্য করে দেখলেন গাড়ি উলটা চলছে। আরে গাড়ি নিচের দিকে না চলে চলছে উপরের দিকে। মনে হচ্ছে অভিকর্ষের দিকে না যেয়ে চলছে বিপরীত দিকে। শুধু চলছে বললে কিন্ত ভুল হবে, গাড়ির গতি বাড়ছে তো বাড়ছেই !

আপনি শুধু স্টিয়ারিং ধরে গাড়ির দিক ঠিক রাখলেই হবে বাড়তে বাড়তে ১২০ কিলোমিটারে গিয়ে ঠেকছে ! শুধু গাড়ি চলা নয়, পানির বোতল কিংবা পানি ফেললে, জুতা রেখে দিলে তাও ঢালুর বিপরীত দিকে গড়াতে থাকে। চিন্তা করা যায় ? আচ্ছা তাহলে কি নিউটনের গ্রাভিটিও অফ ল এক্ষেত্রে অচল? বিষয়টি অলৌকিক মনে হলেও এমনি ঘটনা ঘটে মদিনার রহস্যময় জীনের পাহাড়ের রাস্তায়।

ওয়াদি আল মদিনার রহস্যময় পাহাড়। মানুষের কাছে এটা জিনের পাহাড় নামে খ্যাত। সৌদি আরবের মদিনা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ওয়াদি আল বায়দা নামক স্থানে এই জিনের পাহাড়। আরবরা অবশ্য এই পাহাড়কে জিনের পাহাড় বলেন না। তাদের কাছে এই পাহাড়ের নাম ওয়াদি আল আবইয়াজ বা ওয়াদি আল বায়জা।

 
তবে এই পাহাড়কে কেউ বলে মদিনার জাদুর পাহাড় আবার কেউ বলে চুম্বকের পাহাড়। যে নামেই পরিচিত হোক না কেন এটি পৃথিবীর অবাক এক বিস্ময়। এর আরেক অবাক করা বৈশিষ্ট হলো, এটি সবকিছুকেই টেনে নিয়ে যায় মদিনার দিকে।

ওয়াদি আল জ্বীন বা জ্বীনের পাহাড়ের রহস্য।

ওয়াদি বলা হয় পানি জমা হওয়ার ছোট ছোট খালকে। মদিনার এই পাহাড়ের কাছ দিয়ে একটি ছোট খাল বয়ে গেছে। যদিও এখন শুকনো, পানিশূন্য। তবে বৃষ্টির সময় জমা হওয়া পানি নাকি বেশ মিষ্টি।

মলদ্বারে সহবাস সম্পর্কে জেনে নিন।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে সোস্যাল মিডিয়াতে রহস্যময় এই পাহাড় নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ চলছে পৃথিবীজুড়েই । কোন এক অদৃশ্য শক্তি সবকিছুকেই টানে ওই পাহাড়ের দিকেই! সৌদি আরবে ওয়াদি আল জিন (জিনের উপত্যকা) নামের এলাকায় এমন হয়, লোকে মুখে প্রচলিত হয়ে যায় এটা জিনের কারসাজি। এরুপ অসংখ্য ব্যাখাও পাওয়া যায়।

ওয়াদি আল-বাইদা নিয়ে যে কাহিনী প্রচলিত তা হলো, এই উপত্যকায় জীনরা বসবাস করেন। একসময়  নবী মুহাম্মদ (সঃ) এই উপত্যকায় জীনদের সাথে একটি বৈঠক করেন। যেখানে তিনি জীনদের সাথে চুক্তি করেন তারা মানুষের কোন ক্ষতি করবে না। কথিত আছে এই উপত্যকায় কোন গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ অবস্থায় রাখলে সেটি নিজে নিজেই চালু হয়ে যায় এবং মদিনার দিকে ফিরে আসতে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, এ উপত্যকার চারপাশের পাহাড়ে চৌম্বকীয় শক্তির কারনে এমনটি হয়ে থাকে। *(উইকি থেকে)

প্রচলিত এ ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে ঘটনার প্রমাণ মেলে না। নবী করিম (সা.) জিনদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন মক্কায়। এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু মদিনায় জিনদের সঙ্গে এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায় না।

২০০৯-২০১০ সালের দিকে সৌদি সরকার এই ওয়াদি জ্বীন নামক স্থান দিয়ে একটি রাস্তা বানানোর পরিকল্পনা করে। সেই অনুসারে কাজ এগিয়ে চলছে কিন্ত বিপত্তি বাদে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা বানানোর পরে। হঠাৎ দেখা যায় কাজ করার যন্ত্রপাতি আস্তে আস্তে মদিনা শহরের দিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাচ্ছে।  এমনকি পিচ ঢালাইয়ের ভারী রোলারগুলোও বন্ধ থাকা অবস্থায় আস্তে আস্তে ঢালু বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে।

মনে হচ্ছে যে, কেউ যন্ত্রপাতি গুলো মদিনার দিকে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে । রাস্তায় জমে থাকা পানিও নিচের দিকে না গিয়ে উপরে মদিনার দিকে যাওয়া শুরু করে। অভিকর্ষ অনুযায়ী তো এমন উপরে উঠার কথা না।  কিন্তু কে পাঠাচ্ছে?  কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না।

এমন দৃশ্য দেখে নির্মাণ শ্রমিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পরে তারা সেখানে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে। রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তাটির কাজ যেখানে বন্ধ করা হয় সেখানে চারিদিকে বিশাল বিশাল কালো কালো পাহাড়।

ওখানের শেষ মাথায় গোলচত্বরের মতো হয়ে আবার সেই রাস্তা দিয়েই মদিনা শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই সড়কটি ২০০ কিলোমিটার করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার করেই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।

যেখান কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানে শেষ মাথায় গোল চত্বরের মত করে আবার সেই রাস্তা দিয়েই মদিনা শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৌদি নাগরিকরা সচরাচর এই স্থানটিতে যেতে চায় না। ওয়াদি জ্বীন জায়গাটির অবস্থান মদিনার আল বায়দা উপত্যকায়। উপত্যকাটি মসজিদে নববীর উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ৩০ কিলো মিটার দুরে অবস্থিত।

স্থানীয়রা মনে করে ঐ স্থানে গাড়ি নিয়ে গেলে জীনেরা গাড়ি ঠেলে মদিনার দিকে পাঠিয়ে দেয়। লোকমুখে আরও প্রচলিত আছে যে, নবী করীম (সা.) এর সঙ্গে এই এলাকার জীনদের এমনই চুক্তি হয়েছিল যে তারা মানুষের কোন ক্ষতি করবেনা এবং মানুষ ও তাদের এই এলাকায় আসবেনা। তাই জীনেরা কোন ক্ষতি না করে গাড়ি ঠেলে মদিনার দিকে পাঠিয়ে দেয়। এমন আরও অনেক গুঞ্জন আছে এই নিয়ে।

জীনের পাহাড়ের রহস্য কি ?

জিনের পাহাড়কে ঘিরে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এই জিনের পাহাড় দেখতে আসে। প্রতিবছর হজে আসা মানুষও এই রহস্যঘেরা জিনের পাহাড় দেখার জন্য ভিড় করে।

রহস্যময় এই পাহাড় নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ চলছে পৃথিবীজুড়েই । জিনের সেই পাহাড়টি মদিনায়। কোন এক অদৃশ্য শক্তি সবকিছুকেই টানে ওই পাহাড়ের দিকেই! সৌদি আরবে ওয়াদি আল জিন (জিনের উপত্যকা) নামের এলাকায় এমন হয়, লোকে বলে এটা জিনের কারসাজি।

আসলে কি তাই ?

আসলে জীন বা অন্য কোন শক্তির প্রভাব এখানে নেই। এহ সবাই নিজ চোখে দেখছে এমনি কি ভিডিও দেখছে আর আপনি কিনা বলছে এখানে অদ্ভুত কিছু নেই ? এটা সবার মনে প্রথমে আসবে ।

ওয়াদি আল বাইদা বা ওয়াদ ই জ্বীনে যা হয় তা মূলত “ম্যাগনেটিক হিল” বা “গ্রাভিটি হিল এর কারবার। এটি হল এক ধরনের দৃষ্টি ভ্রম (optical illusion )। অর্থাৎ চোখে দেখার ভুলের কারনে এমন মনে হয়। চার পাশের পরিবেশের কারনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

“ম্যাগনেটিক হিল” বা “গ্রাভিটি হিল” মূলত তৈরি হয় কোন জায়গার যেখানে দিগন্ত (Horizon) সরাসরি সরাসরি দেখা  যায় না। উঁচু নিচু স্থান নির্ধারনের জন্য কোন মানদন্ড থাকে না। ফলে উঁচু দিক কে নিচু আর নিচু দিক কে উঁচু বলে মনে হয়।

আসলে ওয়াদি আল বাইদাতে গাড়ি কিংবা পানি বা কোন বা যে কোন ভারি কিছুই হোক না কেন তা ঢালু রাস্তা বরাবর নেমে যায়। কিন্তু চোখে দেখার ভুলের কারনে মনে হয় গাড়ি সোজা রাস্তা দিয়ে একা একাই চলছে (ইঞ্জিন বন্ধ থাকা অবস্থায়)। অথবা মনে হয় উঁচু থেকে নিচুতে গাড়ি নামানোর সময় ইঞ্জিন চালাতে হচ্ছে (অথচ এক্ষেত্রে কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ রাখালেও গাড়ি চলার কথা ছিল) তানা হলে গাড়ি গড়িয়ে উঁচুদিকে চলে যাচ্ছে। এসব দেখে মনে হয় অভিকর্ষজ বল উল্টা দিকে কাজ করছে।