জ্বীন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস (সংক্ষেপিত)
জ্বীন জাতি সম্পর্কে অনেকেরই আগ্রহ। জ্বীনরা কেমন কি খায়, তাদের জীবন যাত্রা কিরকম। বিশেষ করে আল-কোরানে সূরা জ্বীন নাযিল হবার পর সাহাবীদেরও জ্বীনদের প্রতি কৌতূহল দেখা গিয়েছিল। আমি এখানে মুসলিম বিশ্বের প্রবাদ পুরুষ তাফসীরে জালালাইনের সম্মানিত লেখক ‘আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি (রহঃ)’ জ্বীন জাতিকে নিয়ে উনার লেখা “লাক্বতুল মারজ্বানি ফী আহকামিল জ্বান্ন্” নামক আরবী গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ “জ্বীন জ্বাতির বিস্ময়কর ইতিহাস” বইটি থেকে ও আরো কিছু সহীহ হাদীস থেকে জ্বীন জাতি সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করব। এই বইটি মদীনা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান।
.
এখানে বলে রাখা ভাল অনেক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যেমন অবলোহিত, মাইক্রো ওয়েভ, X-Ray, গামা রশ্মি আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা। জ্বীন ফেরেশতা হয়ত এমন কোন সূক্ষাতি সুক্ষ তরঙ্গ যাদেরকে কোন যন্ত্রপাতি দ্বারাও দেখা যাবে না। জ্বীন শব্দের মোটামুটি অর্থ গুপ্ত, অদৃশ্য, লুকায়িত। শয়তানরাও হল একপ্রকার জ্বীন, যারা আল্লাহর অবাধ্য এবং এরা অভিশপ্ত ইবলিশের বংশধরদের অন্তর্গত। হাদীস তত্ববীদদের মতে জ্বীনদের কয়েক টি শ্রেণী আছে। যেমন সাধারন জ্বীন, আমির জ্বীন এরা মানুষের সাথে থাকে, শয়তান এরা অবাধ্য, উদ্ধত, ইফরীত্ব জ্বীন এরা শয়তানের চাইতেও বিপদজনক। জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদম আঃ এর ২০০০ বছর পূর্বে। জ্বীন জাতির আদি পিতা (আবূল জিন্নাত) সামূমকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আগুণের শিখা দ্বারা তৈরী করার পর আল্লাহ সামূমকে বলেন তুমি কিছু কামনা কর। তখন সে বলে আমার কামনা হল আমরা সবাই কে দেখব কিন্তু আমাদের কে কেউ দেখতে পারবে না। আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয় মৃত্যুর পূর্বে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তায়ালা জ্বীন দের এই দুইটি ইচ্ছাই পূরণ করেন। জ্বিনরা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর পূর্বে আবার যুবক হয়।
অনেকের মাঝে একটা প্রশ্ন আসে যে জ্বীনরা যদি আগুনের তৈরী হয় তাইলে কিভাবে জ্বীন রা জাহান্নামের আগুনে পুড়বে?জ্বীনের আদিপিতা আগুণের তৈরী হলেও এরা মূলত আগুণ নয়। যেমন মানব সৃষ্টির মূল উপাদান কাদামাটি হলেও মানুষ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কাদামাটি নয়। ঠিক তেমনি জ্বিনের পূর্ব পুরুষ আগুণের তৈরী হলেও জ্বীন মানেই আগুন নয়। এর প্রমাণ মুসনাদ আহমদে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস- “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন শয়তান নামাযের মধ্যে আমার সাথে মুকাবেলা করতে আসে তখন আমি তার গলা টিপে দেই। তখন আমি শয়তানের থুথুর শীতলতা নিজের হাতেও অনুভব করছি। ” সুতরাং শয়তান বা জ্বীন যদি দাহ্য আগুণ হয় তাইলে তার থুথু ঠান্ডা হতে পারে না। তাই জাহান্নামের আগুন দ্বারা জ্বীনদের ঠিকই কষ্ট হবে। আশাকরি আপনারা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।জ্বীনদের শরীর মূলত খুব সূক্ষাতি সূক্ষ। জ্বীনরা চাইলে যেকোন কঠিন পদার্থের বাধা অতিক্রম করতে পারে। জ্বীন দের কে আল্লাহপাক বিশেষ কিছু কথা ও কাজ শিখিয়ে দিয়েছেন যার দ্বারা জ্বীনরা চাইলে এক আকার থেকে আরেক আকারে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে জ্বীন দের কাছে সবচেয়ে প্রিয় আকার হল সাপের আকার। জ্বীনরা বেশিরভাগ সময় সাপের আকারে চলাফেরা করতে পছন্দ করে। জ্বীনদের খাবার হল শুকনা হাড় ও গোবর। সহীহ হাদীসে শুকনা হাড় ও গোবর দ্বারা এসেঞ্জা করতে নিষেধ করা আছে। হাদিসে বলা হয়েছে এ দুটা হল জ্বীনদের খাবার। জ্বীন দের সাথে মানুষের বিয়ে হওয়া সম্ভব। সহীহ হাদিসে বলা আছে যে রাণী বিলকিসের পিতা মাতার মধ্যে একজন ছিল জ্বীন। তবে জ্বীনদের সাথে মানুষের বিয়ে হালাল না হারাম এ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ আছে। তবে বেশিরভাগ আলেমদের মতে জ্বীন বিয়ে করা মাকরুহ। অনেক অন্ধ বুযুর্গ জ্বীন মেয়েকে বিয়ে করেছেন যেন সফরে ঐ বুযুর্গের হাটা চলায় সুবিধা হয়। তবে জ্বীনরা যদি চায় তাইলেই মানুষ জ্বিনদেরকে দেখতে পারে। জ্বীন দের সাথে মানুষের উটাবসা, বিয়ে শাদি এটা পুরাটাই জ্বীনদের ইচ্ছা। মানুষের মাঝে যেমন বিভিন্ন ফেরকা, মাযহাব আছে ঠিক তেমনি জ্বীন দের মাঝেও বিভিন্ন দল মত আছে।
অনেক জ্বীন সাহাবী ছিলেন। সীরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পরে প্রথমে ফেরেশতারা এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দেয় এরপরে জ্বীনেরা এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দেয়।
জ্বীন সম্পর্কিত অনেক ঘটনা ,জিনের প্রকারভেদ, আর প্রয়োজনীয় কিছু আলোচনা
ওয়াদি জীন, পৃথিবির মধ্য সব চাইতে আকর্ষণীয় এবং বিস্ময়কর স্থান, সব জীনের বসবাস এখানে । নিজ চোখে দেখে নিন জীনের কেরামতিঃ
ওয়াদি জীন, মদিনা মোনাওয়ারার আল বায়দা উপত্যকা ,পৃথিবীর মধ্য সব চাইতে আকর্ষণীয় এবং বিস্ময়কর স্থান । যদিও সৌদি আরবের কঠোর নীতি কারণে এই দর্শনীয় স্থানটি আন্তজাতিক নজরে তেমন ভাবে আসেনি , তবে এইবার যারা হজ্জে যাচ্ছেন তাদের বলে দিচ্ছি, একবারের জন্য হলেও ঘুরে আসতে পারেন ওয়াদি জীন নাম স্থানটি থেকে , জন প্রতি মাত্র ২০ রিয়াল গাড়ি ভাড়া। তবে কোন সৌদি ট্যাক্সিতে না যাওয়াই ভালো , আর তাছাড়া সৌদিরা যেতেও ভয় পায়। পাকিস্তানি হিন্দি বাঙ্গালী অনেক ট্যাক্সি ড্রাইবার পাবেন, তাদের বললেই হলো ।
ওয়াদি জীন অবস্থান মদিনার আল বায়দা উপত্যকায়।
উপত্যকাটি মসজিদে নববীর উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। এলাকাটি কালো কালো বড় বড় ভয়ংকর পাহারে ঘেরা , এমনেতেই দেখতে ভয় লাগে পাহাড় গুলো ।
আসল কথায় আসি ২০০৯-২০১০ সালের দিকে সৌদি সরকার এই ওয়াদি জীন নাম স্থান দিয়ে একটি রোড বানানোর পরিকল্পনা করে এবং হাজার হাজার শ্রমিক কাজে লাগায় এই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য , কিন্তু সমস্যা হলো কাজ করার যন্ত্রপাতি আস্তে আস্তে মদিনা শহরের দিকে অটোম্যাটিক যাওয়া শুরু করে দেয়। পিচ ঢালাই করার জন্য বড় বড় রোলার গাড়ি গুলা বন্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে উপর দিকে উঠতে থাকে এবং মদিনা শহর মুখি হয়ে রওনা দেয় , এমন কি পেপসির বোতল পানির বোতল বা পানি রাস্তায় ফালালেও সেইটা নিচের দিকে না গিয়ে মদিনার দিকে যাওয়া শুরু করে। আর এই দেখে শ্রমিকরা ভয় পেয়ে যায় এবং মাত্র ৩০-৪০ কিঃমিঃ রাস্তাটি করার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায় । রোডটি যেখানে কাজ বন্ধ করা হয় সেখানে চারি দিকে বিশাল বিশাল কালো কালো পাহার তাই শেষ মাথায় গোল চক্করের মতন করে আবার সেই রাস্তা দিয়েই মদিনা শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে । রাস্তাটি ২০০ কিঃমিঃ হওয়ার কথা ছিল,কিন্তু শ্রমিকরা প্রচণ্ড ভয় পায় এবং এই রাস্তায় গাড়ি এক্সিডেন্ট হতে পারে এই ভেবেই এখানেই শেষ করা হয় কাজ ।
দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় জমায় , এই রাস্তায় গাড়ি বন্ধ করে নিউটালে রাখলে ১২০ কিঃমি ও বেশি স্পীডে গাড়ি চলে।
সবাই মনে করে ওয়াদি জীন নামক স্থানে গাড়ি নিয়ে গেলে জীনেরা গাড়ি ঠেলে মদিনার দিকে পাঠিয়ে দেয় , তবে জীনেরা মানুষ মেরেছে এমন কোন খবর পাওয়া যায়নি , কারণ লোক মুখে শুনেছি নবী করীম (সা.) এর সাথে নাকি এই এলাকার জীনদের সাথে এমনই চুক্তি হয়ে ছিল যে তারা মানুষের কোন ক্ষতি করবেনা এবং মানুষ ও তাদের এই এলাকায় আসবেনা , তাই হয় তো জীনেরা কোন ক্ষতি না করে গাড়ি ঠেলে মদিনার দিকে পাঠিয়ে দেয় , এমন আরো অনেক গুঞ্জন আছে এই নিয়ে , আসলে এই সম্পর্কে কোণ হাদিস আছে কিনা জানা নাই আমার ।
তখন দেখে ছিলাম সৌদি সরকার বেশ কিছু দিন এই রাস্তা বন্ধ করে রেখে ছিল কিন্তু তার পর আবার চালু করে দেয় , এই রাস্তাটি সকাল ৮ থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয় , বিকাল ৪ টার পর আর কোনো গাড়ি বা মানুষ ওয়াদি জীনের এলাকায় যেতে দেওয়া হয় না ।
অনেকেই বলতে পারেন হয় তো অনেক মেগনেট আছে তাই এমনটি হতে পারে , কিন্ত মেগনেট এর সাথে পানির সম্পর্ক কি? পানির বোতল বা পানি ফেললেও তায় নিচের দিকে না গিয়ে উপরের দিকে উঠে।
# জ্বীনদের_প্রকারভেদ_এবং_জীবন_বৃত্তান্তঃ
এই পৃথিবীতে তিন ধরনের জ্বীন রয়েছে। এদের মধ্যে ঘুল( দুষ্ট প্রকৃতির জ্বীন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে),
সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো)
এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জিন আছে যারা জিনদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।
প্রাচীন আরবদের মতে জিন আগুনের তৈরি।
ঝড়-বাদলের দিনে জিনরা চলতে পারে না। কারণ তারা আগুনের তৈরি বিধায় বৃষ্টির সময় আয়োনাজাইশেন ও বজ্রপাতের তীব্র আলোক ছটায় তাদের ক্ষতি হয়ে থাকে এবং কোনো ঘরে যদি নির্দিষ্ট কিছু দোয়া-কালাম ও কাঁচা লেবু থাকে, তাহলে ঐ ঘরে জিন প্রবেশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
আর একটি কথা মানুষ মাটি দিয়ে সৃষ্টি হলেও, শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কারণ মানুষ মূলত মাটি, পানি, বায়ু ও অগ্নির সংমিশ্রণ।
আর তাই জিন আগুনের শিখা দিয়ে পয়দা হলেও তাদের দেহে জলীয় পদার্থের সমাবেশ লক্ষণীয়।
এর স্বপক্ষে যুক্তি হলো, রাসুল (সা:) একদা উল্লেখ করেছিলেন, শয়তান বলে একটি জিন একদা নামাজের সময় তাঁর সাথে মোকাবিলা করতে এলে তিনি ঐ জিনকে গলা টিপে ধরলে, সেইক্ষণে জিনের থুথুতে শীতলতা অনুভব করেছিলেন। [সুরা সাদ ৩৮:৩৫]
এতে প্রতীয়মান হয় যে জিন যদি পুরোপুরি দাহ্য হতো, তাহলে ঠান্ডা থুথু থাকার প্রশ্নেই উঠে না। জিন তিন প্রকারের আওতায় বিদ্যমান।
প্রথমতঃ জমিনের সাপ, বিচ্ছু, পোকা-মাকড়, ইত্যাদি;
দ্বিতীয়ত. শূন্যে অবস্থান করে এবং শেষত সেই প্রকারের জিন, যাদের রয়েছে পরকালে হিসাব। এরা সূক্ষ্ম, তাই স্থূল মানুষ বা পশু-পাখি জিনদের দেখতে পারে না। তবে কুকুর ও উট এদের হুবহু দেখতে পারে। রাতে কোন অপরিচিত বস্তু বা জীব চোখে না দেখা গেলেও কুকুর কি যেন দেখে ছুটাছুটি ও ঘেউ ঘেউ করলে তাতে জিনের আবির্ভাব হয়েছে বলে বুঝতে হবে। জিন বহুরূপী। এরা মানুষ, পশু-পাখি, ইত্যাদি যে কোন সুরত ধরতে পারে।
# জ্বীনকে_বশে_আনার_কৌশলঃ
কোরআন হাদিস দ্বারা জীনের অস্তিত্ব এবং উপকার অপকারের কথা প্রমাণিত।
“তাদের অবস্থান বাথরুম,কবরস্থান,সমুদ্র হয়ে থাকে।”(আবু দাউদ ১ম খন্ড ৪/৬ নং পৃষ্ঠা,হায়াতুল হাইওয়ান)।
তাদের স্ত্রী লিঙ্গধারীদের কে পরী বলা হয়।পরীরা ছেলে মেয়েদেরকে তাদের স্হানে নিয়ে যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়।
জীনদেরকে বশে আনা সম্ভব তবে পন্থাটা ভিন্ন রকম। আমাদের সমাজে জ্বীন বশে আনার কিছু প্রচলিত নিয়ম আছে যেমন:
কেউ কেউ বলে সুরা জ্বীন গভীর রাতে 7 বার পাঠ করে ঘুমালে পর দিন জ্বীন তার সাথে দেখা দেয়।
এরকম আরও আছে যে, সুরা জ্বীন একবারে 300 বার পাঠ করলে জ্বীনের বাদশা ঐ ব্যক্তির গোলাম হয়ে যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন তাবিজের বইতে দেখা যায় বিভিন্ন আয়াত লেখা থাকে এবং সেই আয়াত মেস্ক জাফরানের কালি দ্বারা সাদা কাপড়ে লিখে সেই কাপড় আগুনে পোরালে নাকি জ্বীন এবং পরী বশে আসতে বাধ্য।
সত্যি বলতে কি, এভাবে কখনো জ্বীন বশে আসে না। এই পন্থাগুলো অবলম্বন করে নিজে নিজে বশে আনার চেষ্টা করা মানে নিজের মৃত্যুকে নিজে ডেকে আনা।
এই জন্য একজন জীন সাধক বা তাবিজ প্রদানকারী আলেম থেকে অনুমতি আনতে হবে এবং তার বাতলে দেয়া পন্থায় সাধনা করতে হবে। যখন তারা বশে চলে আসে তখন সে ঐ ব্যক্তির ভিতর দিয়ে হাজির হতে পারে।
মনে রাখতে হবে,মানুষের রক্তের সাথে জীনরা মিশতে পারে।
বিধায় অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।
সূরা জ্বীনের শানেনুজুল এবং এর তাফসীর পড়লে পরিষ্কার হয়ে যাবে, হযরত সুলাইমান আঃ এর বশে জ্বীন ছিলো।
মিশকাত শরীফে উল্লেখিত রাসূল (সাঃ) এর জামানার একটি বাচ্চার ঘটনা আছে, যার জ্বীন বশে ছিলো এবং রাসুল (সাঃ) ও মেনে নিয়েছিলেন।
সুতরাং, জীনকে বশে আনা যায়না ইহা স্রেফ মনগড়া কথা।
# জ্বীন_জাতির_স্থায়ী_বসতি_কোথায়ঃ
ইবনে কাসিম বলেন,
একবার কাইম বিল হারিস (রা:) এর চাচার এক নিকট বন্ধুর বাণিজ্য সহকারীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রীর ভ্রাতুষ্পুত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন,
ইয়া রাসূলুল্লাহ, জ্বীন জাতির স্থায়ী বসতি কোথায়?
উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সন্ধ্যায় যে তারকাকে পশ্চিম আসমানে এবং ভোর রাত্রিতে পুনরায় পূর্ব আসমানের দিকে উদিত হইতে দেখা যায় সেই তারকাতেই জ্বীন জাতির স্থায়ী বসতি।
উল্লেখিত হাদিস শরিফ থেকে ইহাই প্রমাণিত হয় যে আধুনিক বিজ্ঞানীদের এলিয়েনের ধারণাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোরআনের আলোকে ১৪০০ বছর আগেই জীন হিসাবে উল্লেখ করে গিয়েছেন।
# জ্বীনদের_দেখতে_না_পাওয়ার_কারনঃ
এখানে বলে রাখা ভাল অনেক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যেমন অবলোহিত, মাইক্রো ওয়েভ, X-Ray, গামা রশ্মি আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা।
জ্বীন ফেরেশতা হয়ত এমন কোন সূক্ষাতি সুক্ষ তরঙ্গ যাদেরকে কোন যন্ত্রপাতি দ্বারাও দেখা যাবে না।
জ্বীন শব্দের মোটামুটি অর্থ গুপ্ত, অদৃশ্য, লুকায়িত।
শয়তানরাও হল একপ্রকার জ্বীন যারা আল্লাহর অবাধ্য এবং এরা অভিশপ্ত ইবলিশের বংশধরদের অন্তর্গত।
হাদীস তত্তবীদদের মতে জ্বীনদের কয়েক টি শ্রেণী আছে।
যেমন সাধারন জ্বীন, আমির জ্বীন, ইফরীত্ব জ্বীন…
অার ইফরীত্ব জ্বীন শয়তানের চাইতেও বিপদজনক।
জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির ২০০০ বছর পূর্বে।
জ্বীন জাতির আদি পিতা (আবূল জিন্নাত) সামূমকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আগুণের শিখা দ্বারা তৈরী করার পর আল্লাহ সামূমকে বলেন তুমি কিছু কামনা কর। তখন সে বলে আমার কামনা হল আমরা সবাই কে দেখব কিন্তু আমাদের কে কেউ দেখতে পারবে না। আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয় মৃত্যুর পূর্বে।
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তায়ালা জ্বীন দের এই দুইটি ইচ্ছাই পূরণ করেন। জ্বিনরা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর পূর্বে আবার যুবক হয়।
হযরত উমাইয়া বিন মুখ্সী (রা:) বলেছেনঃ
একবার রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এর উপস্থিতিতে একব্যক্তি খানা খাচ্ছিল।
হুযুর (সঃ) প্রত্যক্ষ করলেন খাওয়ার শুরুতে সে বিসমিল্লাহ্ বলে নি। তো শেষ পর্যন্ত সে সবই খেয়ে ফেলল,কেবলমাত্র একটি লোকমা বাকি ছিল।
সেই শেষ লোকমাটি মুখে তোলার আগে সে বলল: “বিসমিল্লাহি্ আউওয়ালাহু অ আখিরহু”–অর্থঃ (‘খাবারের শুরুতে এবং শেষে আল্লাহর নাম নেওয়া হল’।)
তখন নবীজি (সঃ) হেসে ফেললেন এবং বললেন:
শয়তান ওর সাথে খাবারে শরীক ছিল,কিন্তু যখনই ও আল্লাহর নাম নিয়েছে অমনই শয়তান যা কিছু তার পেটে গিয়েছিল সব বমি করে দিয়েছে।।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সামনে একবার এক ব্যাক্তিকে পেশ করা হয়,যার প্রতি যাদুর অভিযোগ ছিল।
হাজ্জাজ তাকে প্রশ্ন করেন- “তুমি কি যাদুকর?”
সে বলে – “না”।
হাজ্জাজ তখন একমুঠো কাঁকর নিয়ে সেগুলো গণনা করেন।
তারপর প্রশ্ন করেন-“আমার হাতে কতসংখ্যক কাঁকর আছে?”
লোকটি বলে -“এত সংখ্যক”
হাজ্জাজ তখন সেগুলো ফেলে দেন।তারপর ফের একমুঠো কাঁকর নেন তারপর সেগুলো না গুনেই জিজ্ঞেস করলেন-“এখন আমার হাতে কয়টা কাঁকর আছে?”
সে বলে- “আমি জানি না”
হাজ্জাজের প্রশ্ন- ‘প্রথমবারে তুমি ঠিকঠাক বলে দিলে কিন্তু দ্বিতীয়বার পারলে না কেন?’
লোকটির উত্তর- ‘প্রথমবার আপনি জেনে ছিলেন এর দ্বারা আপনার অসওয়াসাও জেনেছে। তারপর আপনার অসওয়াসা আমার অসওয়াসাকে জানিয়ে দিয়েছে কিন্তু এবারে আপনি জানেননি তাই আপনার অসওয়াসাও জানতে পারে নি।
ফলে আপনার অসওয়াসা আমার অসওয়াসাকে বলে নি।যার কারনে আমিও জানতে পারি নি।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃ-
আমি ও জনাব রসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনা শরীফের একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় (দেখলাম) একটি লোকের মৃগী হল। আমি তার কাছে গিয়ে তার কানে (কোরআনের আয়াত) তেলওয়াত করলাম ফলে সে সুস্থ হলো।
জনাব রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন – তুমি ওর কানে কী পড়লে? আমি বললাম- “আফা হাসিবতুম আন্নামা খালাকনাকুম আবাসাউ্ অ আন্নাকুম ইলাইনা লা তুরজাউন” (সূরাহ মুমিনূন,আয়াত- ১১৫) থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত তেলওয়াত করেছি। নবীজী বললেন-
যার হাতে আমার জীবন তার কসম! কোনও মুমিন মানুষ যদি এই আয়াতটুকু কোনও পাহাড়ের উপরেও পড়ে, তবে সে পাহাড়ও হটে যাবে।।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) বলেছেনঃ
এক রাতে আমি হেরেম শরীফে প্রবেশ করি। সেই সময় কয়েকজন মহিলাকে তাওয়াফ করতে দেখে অবাক হয়ে যাই। তাওয়াফ করার পর ‘বাবুল হুজাবাইন’ দিয়ে বের হয়ে যায় । আমি মনে মনে বললাম যে,আমি ওদের পিছনে পিছনে যাবো এবং ওদের বাড়ি কোথায় দেখবো।সুতরাং ওরা যেতে লাগলো আর আমিও ওদের অনুসরন করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত ওরা এক পাহাড়ের উপত্যকায় পৌঁছল।
তারপর সেই পাহাড়ের উপর উঠলো। তারপর ওরা পাহাড় থেকে নেমে এক বিরান জায়গায় গিয়ে পৌঁছল।
আমিও পিছনে পিছনে গেলাম, সেখানে দেখলাম কয়েকজন মুরুব্বি গোছের মানুষ বসে আছে। তারা আমাকে বলল ‘হে ইবনু যুবাইর!, আপনি এখানে কীভাবে এলেন?’
আমি বললাম ‘আপনারা কারা ?’। তারা বলল ‘আমরা জীন’।
আমি বললাম ‘আমি এমন কয়েকজন মহিলাকে কাবাঘরের তাওয়াফ করতে দেখলাম,যাদেরকে অন্য প্রজাতির সৃষ্টি বলে মনে হল। তাই আমি ওদের পিছু নিলাম এবং ওদের পিছনে পিছনে এখানে এসে পৌঁছে গেলাম।’
তারা বলল ‘ওরা ছিল আমাদেরই মহিলা’।
আচ্ছা, হে ইবনু যুবাইর! আপনি কি খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন? বললাম ;আমার মন চাইছে টাটকা খেজুর খেতে।’ সেই সময় মক্কা শরীফের কোথাও কোন টাটকা খেজুরের চিহ্ন পর্যন্ত ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা আমার কাছে টাটকা খেজুর নিয়ে এলো। আমার খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর তারা বলল, ‘যেগুলো অবশিষ্ট থেকে গেছে ওগুলো আপনি নিয়ে যান।
হযরত ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলেছেনঃ এরপর আমি সেখান থেকে উঠি এবং বাড়ির পথে পা বাড়াই। আমার উদ্দেশ্য ছিল খেজুরগুলো মক্কার লোকদের দেখানো।
বাড়ি ফিরে খেজুরগুলো একটা টুকরিতে রাখলাম। টুকরিটা একটা সিন্দুকে রেখে শুয়ে পড়ি। আল্লাহর কছম!! আমি তখন আধঘুম- আধাজাগা, এরকম তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ঘরের মধ্যে হুটপাটার আওয়াজ শুনলাম এবং শুনলাম এইসব কথাবার্তা-
– হ্যাঁ হ্যাঁ রেখেছে।
– সিন্দুকে।
– সিন্দুক খোল।
– সিন্দুক তো খুললাম কিন্তু খেজুর কই?
– টুকরির মধ্যে।
– টুকরি খোল।
– টুকরি খোলতে পারব না। কারন ইবনু যুবাইর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে টুকরি বন্ধ করেছিলেন।
– তাহলে টুকরি সমেত সঙ্গে নিয়ে চলো।
সুতরাং তারা টুকরি নিয়ে চলে গেলো।
হযরত ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলছেনঃ ওরা যখন আমার ঘরের মধ্যেই ছিল, তখন কেন যে ওদের ধরি নি, সে কথা ভাবলে আমার এখন প্রচণ্ড আফসোস হয়।
ইমাম আ’মাশ (রহঃ) বলেছেনঃ-
আমি এক জীনের বিয়েতে ‘কুই’ নামক এক স্থানে উপস্থিত ছিলাম। বিয়েটি ছিল জীনের সাথে এক মানুষের।
জীনদের জিজ্ঞাসা করা হল কোন খাদ্য তাদের বেশি পছন্দনীয়, ওরা বলল ‘ভাত’
তো লোকেরা জীনদের কাছে তাদের খাঞ্জা আনতে থাকছিল আর ভাত শেষ হতে থাকছিল কিন্তু খানেওলাদের হাত দেখা যাচ্ছিল না।
বর্ণনায় হযরত আলিদ বিন মুসলিম (রহঃ) –
একবার একটি লোক একটি গাছে কিছু আওয়াজ শুনলেন এবং (কৌতূহলবশত আওয়াজকারী জীনের সাথে ) কথা বলতে চাইলেন।কিন্তু সে কোন সাড়া দিল না। লোকটি তখন আয়াতুল কুরছি পড়লেন।
ফলে তার কাছে একটা জিন নেমে এলো। লোকটি তাকে জিজ্ঞাসা করলো,”আমাদের মধ্যে একজন ( সম্ভবত জীনঘটিত কারনে )অসুস্থ হয়ে আছে, আমরা কিসের দ্বারা তার চিকিৎসা করবো?” জিনটি বলল, “যার দ্বারা আপনি আমাকে গাছ থেকে নামালেন”
বর্ণনায় হযরত ইবনে আকিল (রহঃ) – আমাদের একটি বাড়ি ছিল।তাতে যখনি কোন লোক থাকতো ,সকালে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যেত। একবার মরক্কোর এক লোক এল।ঘরটি সে পছন্দ করে ভাড়ায় নিল।
তারপর রাত কাটালো । সকালে দেখা গেল,সে পুরোপুরি বহাল তবিয়তেই রয়েছে । তার কিছুই হয় নি । তা দেখে প্রতিবেশীরা অবাক হল । লোকটি বেশ কিছুকাল অই ঘরেই থাকল ।তারপর অন্য কোথাও চলে গেল ।
ওকে ওই ঘরে নিরাপদে থাকার কারন জিজ্ঞাসা করলে ও বলেছিল…আমি যখন ওই ঘরে (প্রথম দিন) রাতে থাকি,তখন এশার নামায পড়েছি ,কোরআন পাক থেকে কিছু পরেছি।এমন সময়…
হঠাৎ দেখি,এক যুবক কুয়ো থেকে উপরে উঠছে । সে আমাকে সালাম দিল । আমি তাকে দেখে ভয় পেলাম । সে বলল,ভয় পেয় না । আমাকেও কিছু কোরআনপাক শেখাও । অতএব আমি তাকে কোরআন শেখাতে শুরু করি।
পরে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি ,এই ঘরের রহস্যটা কি?সে বলে আমরা মুসলমান জীন,আমরা কোরআন পাঠও করি, নামায ও পড়ি । কিন্তু এই ঘরে বেশিরভাগ সময় বদমাশ লোকেরা থাকে, যারা মদপানের মজলিশ বসায়। তাই আমরা ওদের গলা টিপে দেই । আমি বললাম , রাতের বেলায় আমি তোমাকে ভয় পাই । তুমি দিনের বেলায় আসবে । সে বলল, খুব ভালো। তারপর থেকে সে দিনের বেলা কুয়ো থেকে বের হত ।
একবার সে কুরআনপাক পড়ছিল। এমন সময় বাহিরে এক ওঝা এলো, সে আওয়াজ দিয়ে বলল ,আমি সাপে কাটা ,বদ নজর লাগা ও জিনে ধরার ফুক দেই গো!! -এ কথা শুনে জিনটি বলল ও আবার কে? আমি বললাম ও হল ঝারফুককারী ,ওঝা।সে বলল, ওকে ডাকো। আমি উঠে গিয়ে তাকে ডেকে আনলাম।
এসে দেখলাম সেই জিনটি বিরাট বড় সাপ হয়ে ঘরের (ভিতরের) ছাদে উঠে রয়েছে। ওঝা এসে যারফুক করতে সাপটি ঝটপট করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সাপটি মেঝেতে পরে গেলো। তখন তাকে ধরে ঝাপিতে ভরে নেবার জন্য ওঝা উঠল। কিন্তু আমি তাকে মানা করলাম। সে বলল,তুমি আমাকে আমার শিকার ধরতে মানা করছো। আমি তাকে একটি স্বর্ণমুদ্রা (আশরাফি) দিতে সে চলে গেলো।
তখন সেই অজগর নড়াচড়া করল এবং জিনের রুপ প্রকাশ পেল। কিন্তু সে তখন দুর্বলতার দরুন হলদে হয়ে গিয়েছিল। আমি তাকে বললাম তোমার কি হয়েছে? সে বলল ওই ওঝা আমাকে পাক ইসমের মাধ্যমে শেষ করে ফেলেছে। আমি বাচবো বলে আর বিশ্বাস হচ্ছে না। যদি তুমি এই কুয়ো থেকে চিৎকারের শব্দ শুনতে পাও,তবে এখান থেকে চলে যেও। সেই রাতেই আমি কুয়োর ভিতর থেকে এই আওয়াজ শুনলাম,”তুমি এবার চলে যাও”।
বর্ণনাকারী ইবনে আকিল (রহঃ) বলেন, তারপর থেকে ওই ঘরে লোক থাকা বন্ধ হয়ে গেলো।।
#হিজড়া_জন্মায়_কিভাবে
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন হিজড়া জ্বীন দের সন্তান। জনৈক ব্যক্তি তাকে জিগ্গেস করলো এরকম কিভাবে হতে পারে? তিনি উত্তরে বলেন -আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নিষেধ করেছেন যাতে কেউ তার স্ত্রীর সাথে মাসিক চলাকালে সঙম না করে কারন তখন শয়তান আগে থাকে , এবং ঐ শয়তানের দ্বারা ঐ মহিলা গর্ভবতী হয়ে হিজড়া সন্তান প্রসব করে।
জ্বীন জাতির মাঝে নবী রাসূল এসে ছিল কিনা এটা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ। এ ব্যাপারে আল-কোরআনে সূরা আনআমের ১৩০ নং আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেছেন, আমি জ্বীন ও মানুষ উভয়ের মাঝে নবী রাসূল প্রেরন করেছি তাদের মাঝ থেকে যারা তাদের আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছিল । তাহলে এখন জ্বীনদের নবী রাসূল কারা ? আদম (আঃ) এর আগমনের পূর্বে থেকেই জ্বীনরা পৃথিবীতে বসবাস করতো। ঐ সময় তাদের মাঝেও আল্লাহর বিধি বিধান নাযিল হত। তাই জ্বীনদের মাঝে জ্বীনদের কাছ থেকেই নবী রাসূল এসেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত আল-কোরআনের যে বাংলা অনুবাদ ও তাফসীর এক খন্ডে এক সময় বাংলাদেশে দেয়া হয়েছিল বিনামূল্যে এটা হল তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন। আপনি যে কোন মসজিদে বা পাবলিক লাইব্রেরীতে এই অখন্ড তাফসীর গ্রন্থটা পাবেন। তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআনের ৪১৩-৪১৪ নং পৃষ্টায় সূরা আনআমের ১৩০ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় যা বলা হয়েছে তা হল ভারত বর্ষের হিন্দুরা বলে তাদের ধর্ম গ্রন্থ বেদের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরানো। বেদে একেশ্বরবাদের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ, মুহাম্মাদ এই শব্দ গুলিও বেদে আছে। হিন্দুরা যাদের পূজা করে এই সব দেবতাদের রয়েছে অনেক গুলি হাত পা, হাতির মত শুড়, অনেক গুলি চোখ। জ্বীন দের পক্ষে এরকম আকৃতি ধারন করা কোন ব্যাপারই না । দূর্গা, কালি, গণেশ এরা হতে পারে জ্বীন । হয়ত জ্বীনদের মাঝে থেকে এসব আকৃতির নবী হিসাবে কেউ এসেছিল । কালের বিবর্তনে মানুষ বা অন্য জ্বীনেরা তাদেরকেই পূজা শুরু করে। ঠিক অনেকটা হযরত ঈসা (আঃ)-এর মত। খ্রিষ্টানরা যেমন ঈসাকে আল্লাহর ছেলে বানিয়েছে (নাউযুবিল্লাহ) জাহেলিয়াতের যুগে আরবরাও বিভিন্ন জ্বীনের মূর্তি বানিয়ে পূজা করত। ইসলাম আসার পর ঐ জ্বীনেরা মুসলমানরা হলেও ঐ কাফেররা কিন্তু তাও ঐ জ্বীনের পূজা করত। জ্বীনরা সাধারন ১৫০০-২০০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। আপনারা যে কোন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তাফসীরে মা আরেফুল কোরআনে সূরা আন আমের ১৩০ নং আয়াতের তাফসীর দেখলেই জ্বীনদের নবী রাসূল সম্পর্কে এসব তথ্য খুজে পাবেন। তবে শেষ নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসার পর ঐ সব নবী রাসূল বা আগের ধর্ম গ্রন্থের বিধিবিধান রহিত হয়ে গেছে। এখন শুধু ইসলামের কথাই মানতে হবে। সাহাবীরা যখন ইরাক,ইরান,সিরিয়া প্রভৃতি দেশ জয় করতে জিহাদে অংশ গ্রহন করেছিলেন তখন অনেক জ্বীন সাহাবীও ঐ জিহাদে অংশগ্রহন করেছিল। দেখা গেছে যে সাহাবীরা সর্ব সাকুল্যে মাত্র ১০০০০ আর কাফেররা প্রায় ২ লাখের মত। তাও দেখা গেছে ঐ সব জিহাদে কাফের সৈন্যরা দাড়াতেই পারেনি । সেই সময় জ্বীন সাহাবীরা অসাধারন বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল ।
জ্বীনদের প্ররোচনা
নামাযে, ওজুতে ও অন্যান্য কাজের সময় সে সব শয়তান ও জীন আমাদের প্ররোচনা দেয় তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও বেচে থাকার উপায় !
জিনদের নাম, পরিচয় ও তাদের কাজঃ
১. ‘ইবলিস’ – আদম (আঃ) কে ওয়াসওয়াসা দিয়ে যেই জিন আল্লাহর আনুগত্য থেকে তাকে বিচ্যুত করেছিল – তার নাম হচ্ছে ইবলিস। আল্লাহ তাকে সরাসরি আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, সে হচ্ছে প্রথম জিন যেমন আদম (আঃ) হচ্ছেন প্রথম মানুষ। আদম (আঃ) কে সিজদা করতে অস্বীকার করে সে আল্লাহর সামনে অহংকার প্রদর্শন করে – এই কারণে সে ‘কাফের’ হয়ে চির জাহান্নামী ও আল্লাহর অভিশপ্রাপ্ত। তার সন্তানদের কেউ ঈমানদার মুসলিম, আবার কেউবা কাফের, তাদের পিতা ইবলিসের অনুসারী। যারা কাফের জিন, তাদেরকে সাধারণভাবে ‘শয়তান’ বলা হয়।
আদম (আঃ) ও ইবলিসের কাহিনী সংক্ষেপে জানার জন্য আপনারা সুরা ত্বা হা এর ১১৫-১৩৫ নাম্বার আয়াত পড়ুন।
২. ‘খানজাব’ – খানজাব হচ্ছে বিশেষ একপ্রকার জিন, যারা মানুষ যখন সালাতে দাঁড়ায় তাদেরকে নানান রকম চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে নামায থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন করে তুলে। এর ফলে তারা সালাতে ভুল করে, কত রাকাত পড়েছে মনে থাকেনা, কোনটা কি করছে সন্দেহে পড়ে যায়। এর কারণে সওয়াবও কমে যায়। তাই আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে যথযথ খুশু ও খুজু সহকারে মনোযোগী হয়ে সালাত আদায় করার জন্য।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“নামাযের জন্য আযান দেওয়ার সময় শয়তান সশব্দে বায়ু ছাড়িতে ছাড়িতে পালায়, যেন সে আযানের শব্দ না শোনে। আযান শেষ হইলে সে আবার আসে। ইকামত আরম্ভ হইলে আবার পলায়ন করে। ইকামত বলা শেষ হইলে পূনরায় উপস্থিত হয় এবং ওয়াসওয়াসা ঢালিয়া নামাযী ব্যক্তি ও তাঁহার অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টী করে। যে সকল বিষয় তাহার স্বরণ ছিল না সেই সবের প্রতি আকৃষ্ট করিয়া সে বলিতে থাকেঃ অমুক বিষয় স্বরণ কর, অমুক বিষয় স্বরণ কর। ফলে সেই ব্যাক্তি কত রাকাআত নামায পড়য়াছে এমনকি সেটাও ভুলিয়া যায় ।(বিঃদ্রঃ নামাযে ওয়াসওয়াস প্রদাওনকারী শয়তানের নাম হচ্ছে “খানজাব”)
[মুয়াত্তা মালিক :স্বলাত অধ্যায় ৩, হাদিস ১৫২]
এ থেকে বাচার উপায়ঃ
নামাযে কিরাত পড়া শুরু করার আগে “আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম” পড়বেন। আ’উযুবিল্ললাহ শুধু প্রথম রাকাতেই পড়তে হয়, এর পরের রাকাতগুলোর শুরুতে পড়তে হয়না। এই দুয়া পড়ে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়, কারণ নামাযে দাড়ালে খানজাব নামের শয়তান কুমন্ত্রনা দিয়ে নামাযকে নষ্ট বা ক্ষতি করতে চায়।
নামাযের মাঝখানে সুরা-কেরাতে বা কত রাকাত, রুকু সেজদা নিয়ে শয়তান খুব বেশি ওয়াসওয়াসা দেয়/সন্দেহে ফেলে দেয় তাহলে কি করতে হবে?
সালাতে ও কেরাতের মাঝে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পতিত ব্যক্তি যেই দো‘আ করবেঃ
“আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম”
এই দুয়া বলে তারপর বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে (থুতু ফেলার মতো করে নিঃশব্দে ফু দিবে, কিন্তু থুতু ফেলবেনা)।
উসমান ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার নামাযের মাঝে অনুপ্রবেশ করে এবং কিরাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা (উপরে যা বলা হয়েছে) বলার নির্দেশ দেন, তিনি সেটা করার পর আল্লাহ তাঁকে সেটা থেকে মুক্ত করেন। [মুসলিম ৪/১৭২৯, ২২০৩]
৩. ‘ওলহান’ – এরা হচ্ছে একপ্রকার শয়তান জিন যারা মানুষকে ওযুর সময় ওয়াসওয়াসা দেয়। ওয়াসওয়াসাগ্রস্থ মানুষেরা ওযুতে ভুল করে বেশি, এক কাজ কয়েকবার করে, তবুও মনে সন্দেহ থেকে যায় ওযুর অমুক অংগ ধোয়া হয়েছে কিনা? এরা পানি বেশি অপচয় করে।
কি করতে হবে?
এই ওয়াসওয়াসায় যারা আক্রান্ত তারা মনোযোগের সাথে কোন পাত্রে নির্দিষ্ট পানি নিয়ে ওযু করবেন, টেপ ছেড়ে দিয়ে অমনোযোগী হলে শয়তান সহজেই ওয়াসওয়াসা দিবে। অবশ্যই আল্লাহর নাম ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আস্তে ধীরে ওযু শুরু করবেন, অবশ্যই তাড়াহুড়া করবেন না। প্রতিটা অংগ মনোযোগের সাথে উত্তমরুপে ধৌত হচ্ছে কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। আর কোন অংগ ধৌত করতে ভুলে গেলে নিশ্চিত হলে মেজাজ খারাপ না করে ঐ অংগ থেকে ধোয়া শুরু করবনে। আর ওয়াসওয়াসা পড়লে এই দুয়া পড়বেনঃ
“আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম” – এই দুয়া পড়ে শয়তান মনে কি ওয়াসওয়াসা দেয় সেইদিকে কোন লক্ষ্য করবেন না। যেই অংগ থেকে ভুল করেছেন সেখান থেকে ওযু সম্পূর্ণ করবেন। আস্তে আস্তে মনোযোগী হয়ে ওযু করার অভ্যাস গড়ে তুললে আস্তে আস্তে শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারবেন ইন শা’ আলাহ।
৪. ‘ক্বারীন’ – ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জিন লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। এরা সবসময় বান্দার অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উতসাহিত করে। ক্বুরানে আল্লাহ এদের কথা উল্লেখ করেছেন সুরাতুল ক্বাফে।
আ’উযু বিল্লাহি মিনাশ-শাইতানির রাযীম
“মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেইতো তুমি টালবাহানা করতে। এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন। প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে। তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী। তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ন। তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবেঃ আমার কাছে যে, আমলনামা ছিল, তা এই। তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে, যে বাধা দিত মঙ্গলজনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর। ‘ক্বারীন’ (তার সঙ্গী শয়তান) বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ বলবেনঃ আমার সামনে বাকবিতন্ডা করো না, আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম। আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।
সুরা ক্বাফঃ ১৯-২৯।
জ্বিন জাতির রহস্য
জ্বীন জগৎ:
জ্বিন জগৎ একটি পৃথক জগৎ । সে জগৎ মনুষ্য জগৎ ও ফিরিশতা জগৎ থেকে আলাদা । তবে জ্বিন ও ইনসানের মধ্যে কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে । যেমন জ্ঞান-বুদ্ধি ও ভালো-মন্দ নির্বাচন করে চলার ক্ষমতা ইত্যাদি । অবশ্য বহু বিষয়ে জ্বিন মানুষ থেকে পৃথক । সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল, মানুষের সৃষ্টি-উপাদান ও জ্বিনের সৃষ্টি-উপাদানের ভিন্নতা ।
জ্বিন:
আরবীতে ‘জিন্ন’ মানে আড়াল, অন্তরাল, পর্দা, গোপন ইত্যাদি । আর যেহেতু জ্বিন জাতি মানুষের চক্ষুর অন্তরালে থাকে, তাই তাদেরকে জ্বিন বলে ।
জ্বিন সৃষ্টির মূল উপাদান:
মহান আল্লাহ সুবহানওয়া পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন, জ্বিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে । তিনি বলেছেন- ‘এর পূর্বে আমি জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি ধূম্রহীন বিশুদ্ধ অগ্নি হতে ।’ -(সূরা আল হিজ্বর, আয়াত: ২৭)
জ্বিন জাতির সৃষ্টিকাল:
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জ্বিন জাতিকে মানুষের পূর্বেই সৃষ্টি করা হয়েছে । আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে । আর এর পূর্বে জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি ধূম্রহীন বিশুদ্ধ অগ্নি হতে ।’ -(সূরা আল হিজ্বর, আয়াত: ২৬-২৭)
জ্বিনদের দৈহিক আকৃতি:
এই ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানওয়া তা’আলা যা বলেছেন: ”আমি তো বহু জ্বিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শুনে না, তারা জন্তু জানোয়ারের মত, বরং এর চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারাই হল উদাসীন ।” -(সূরা আরাফ, আয়াত: ১৭৯)
জ্বিনদের প্রকারভেদ:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জ্বিন তিন শ্রেণীর । এক শ্রেণীর ডানা আছে, তারা এর সাহায্যে বাতাসে উড়ে বেড়ায়, এক শ্রেণী সাপ-কুকুরের আকারে বসবাস করে, আর এক শ্রেণী স্থায়ীভাবে বসবাস করে ও ভ্রমণ করে । -(ত্বাবারানীর কাবীর, হা: ৫৭৩; হাকেম, হা: ৩৭০২)
জ্বিনের অস্তিত্ব:
বহু মানুষ আছে, যারা জ্বিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না । বিশেষ করে বস্তুবাদী মানুষেরা অদৃশ্য জগতের কোন কিছুকেই বিশ্বাস করতে চায় না । আসলে জ্ঞান না থাকা কোন কিছুর অস্তিত্বহীনতার দলিল নয় । এ ব্যপারে আল্লাহ্ সুবহানওয়া বলেন: “বরং তারা এমন বিষয়কে মিথ্যা মনে করেছে, যাকে নিজ জ্ঞানের পরিধিতে আনয়ন করেনি কিংবা এখনো তাদের নিকট ওর পরিণাম (আযাব বা ব্যখ্যা) এসে পৌঁছেনি ।…..” -(সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৯)
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেছেন্, ‘মুসলিমদের কোন ফির্কা (জাহমিয়্যাহ ও মু’তাযিলাহ্ ব্যতীত) জ্বিনের অস্তিত্বের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেনি । কাফিরদের অধিকাংশ ফির্কাও জ্বিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে ।’ -(মাজমূ ফাতাওয়া ১৯/১০)
#জ্বিন দর্শন:
জ্বিন দর্শনের ব্যাপারে বর্ণিত সবচেয়ে সত্য কথা হলো নবী (সা:) এর জ্বিনের সাথে সাক্ষাৎ করা, কথা বলা, শিক্ষা দেওয়া, কুরআন তিলাওয়াত করে শুনানো ইত্যাদি ।
ইবনে মাসঊদ (রা:) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা:) কে আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না । অতঃপর তাঁকে পাওয়া গেলে তার কারণ জিজ্ঞেস করলাম । তিনি বললেন, “আমার কাছে জ্বিনের এক আহ্বায়ক এসেছিলো । আমি তার সঙ্গে গিয়ে তাদের কাছে কুরআন পড়লাম । অতঃপর তিনি আমাদেরক সঙ্গে নিয়ে তাদের (জ্বিনদের) বিভিন্ন চিহ্ন ও আগুনের চিহ্ন দেখালেন । তারা তাঁর নিকট খাদ্য চেয়েছিল । তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর নাম উল্লেখ করে যে কোন হাড্ডির উপর তোমাদের হাত পড়বে, তা তোমাদের জন্য পর্যাপ্ত গোশতে পরিণত হবে । আর প্রত্যেক গোবর হবে তোমাদের পশু খাদ্য । -(মুসলিম, হা: ১০৩৫)
মানুষ সচরাচর জ্বিন দেখতে পায় না, কিন্তু কিছু জীব-জন্তু যেমন, গাধা ও কুকুর জ্বিন দেখতে পায় । -(বুখারী, হা: ৩৩০৩)
শয়তানের কতিপয় দুর্বলতা ও অক্ষমতা
জ্বিন মানুষের মতোই, কোথাও সে শক্তিশালী, কোথাও বড় দুর্বল । শয়তান শক্তিশালী হলেও তার চক্রান্তের ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ বলেন:
“নিশ্চয়ই শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল ।” -(সূরা আন নিসা: ৭৬)
★প্রথমত:
নেক লোকদের উপর শয়তানের কোন আধিপত্য নেই । শয়তানের শক্তি ও প্রতিজ্ঞা আছে, সে আদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করবে । কিন্তু সকলকে নয় । কিছু লোকের কাছে সে বড় মিসকীন ও দুর্বল । তাদেরকে সে কুফরী ও ভ্রষ্টতার বাধ্য করতে সক্ষম হবে না । চেষ্টা তো করবে, কিন্ত সফল হবে না । কারণ তাদের বুনিয়াদ হবে মজবুত, তাদের ঈমান হবে সুদৃঢ়, তাদের আমল হবে নেক এবং তাদের সহায়ক হবেন খোদ প্রতিপালক । তিনি বলেছেন,
“আমার দাসদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই । আর কর্মবিধায়ক হিসাবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট ।” -(সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৬৫)
শয়তানের আধিপত্য কেবল তাদের উপর, যারা তার চিন্তা-চেতনায় এক মতাবলম্বী । যারা স্বেচ্ছায় তার অনুসরণ করে এবং সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতা করে । মহান আল্লাহ্ বলেছেন,
জ্বীন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস (সংক্ষেপিত)
“বিভ্রান্তদের মধ্য হতে যারা তোমার (শয়তানের) অনুসরণ করবে তারা ছাড়া আমার (একনিষ্ঠ) বান্দাদের উপর তোমার কোন আধিপত্য থাকবে না ।” -(সূরা আল হিজ্বর, আয়াত: ৪২)
★দ্বিতীয়ত:
শয়তান কিছু মু’মিনকে দেখে ভয়ে পালায়ন করে ।কোন বান্দা যখন ইসলামে পরিপক্বতা লাভ করে, ঈমান তার মর্মমূলে বদ্ধমূল হয়, মহান আল্লাহর সীমারেখার হিফাযত করে, তখন শয়তান তার সাক্ষাতে ভয় করে এবং তাকে দেখে পলায়ন করে ।
তেমনই একজন ব্যক্তি ছিলেন উমার বিন খাত্তাব (রা:) । শয়তান তাঁকে ভয় করত । নবী (সা:) তাঁকে বলেছিলেন, “শয়তান অবশ্যই তোমাকে ভয় করে হে উমার!” (তিরমিযী)
★তৃতীয়ত:
শয়তান স্বপ্নে নবী (সা:) এর রূপ ধারণ করতে পারে না ।
★চতুর্থত:
শয়তানেরা কোন মু’জিযা দেখাতে সক্ষম নয় ।
★পঞ্চমত:
মহাকাশে তাদের নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করতে পারে না ।
★ষষ্ঠত:
আল্লাহর নাম নিয়ে বন্ধ দরজা তারা খুলতে পারে না ।