পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে আজানের মাধ্যমে মানুষকে নামাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে সাক্ষ্য দেওয়া হয় আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসুল (সা.)-এর রিসালাতের। তাই আজানকে ইসলামের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলামের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও করণীয় রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে বাস্তবায়ন করে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে শেখালেও তিনি কখনো আজান দিয়েছেন বলে প্রমাণিত নয়।
মহানবী (সাঃ) কেন আজান দিতেন না?
মহানবী (সাঃ) কেন আজান দিতেন না?
মহানবী (সা.) কেন আজান দেননি সে বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবে ইসলামের প্রাজ্ঞজনরা এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন নানাভাবে। আবার তাঁদের অনেকেই এমন প্রশ্নকে বাহুল্য অবহিত করে তার উত্তর দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।
যাঁরা এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁদের কয়েকজনের মতামত এখানে তুলে ধরা হলো। বেশির ভাগ আলেম রাসুলে আকরাম (সা.)-এর আজান না দেওয়ার কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘আজানে মানুষকে নামাজ ও কল্যাণের পথে আহ্বান জানানো হয়। আর রাসুল (সা.)-এর আহ্বান আদেশতুল্য ও অবশ্যপালনীয়। সুতরাং তিনি আজান দিলে সব শ্রোতার ওপর কল্যাণ তথা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সব নির্দেশনা সাধারণভাবে মান্য করা ওয়াজিব হয়ে যেত। এতে আহ্বান উপেক্ষা করার জন্য অপরাধী হয়ে যেত অনেকেই। আর হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যারা অস্বীকার করল। তাঁরা (সাহাবিরা) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, অস্বীকারকারী কে? তিনি বলেন, যে আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল। আর যে আমার অবাধ্য হলো সে অস্বীকার করল।’
আবার কেউ কেউ বলেন, মহানবী (সা.) যদি বলেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।’ তাহলে কারো কারো ধারণা হতে পারে, তিনি ছাড়া অন্য কোনো নবীর ব্যাপারে মুহাম্মদ (সা.) সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) যদি আজান দেন, তাহলে তা উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
কোনো কোনো মুহাদ্দিস বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম হলেন দায়িত্ব গ্রহণকারী আর মুয়াজ্জিন হলেন সংরক্ষক।’ (মুসনাদে আহমাদ)
এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন। যেহেতু মুহাম্মদ (সা.) ইমামতি করতেন, তাই তিনি আজান দিতেন না। তা ছাড়া ইমামতির দায়িত্ব মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক হিসেবে তাঁর জন্য নির্ধারিত ছিল। একই কারণে হজরত খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)সহ ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মনীষী ও রাষ্ট্রনেতারা আজান দেননি। কিন্তু তাঁরা ইমামতি করেছেন।
তবে তাঁরা আজান না দেওয়ায় মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ও অবস্থানের ব্যাপারে ভুল ধারণার শিকার হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা সহিহ হাদিস দ্বারা মুয়াজ্জিনের সম্মান ও মর্যাদা প্রমাণিত। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের ঘাড় হবে সবচেয়ে উঁচু।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৮৭)
শায়খ ইজ্জুদ্দিন বিন আবদুস সালাম বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কাজ করলে সাধারণত তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন। যেহেতু সার্বিক দায়িত্ব পালনের পর নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেওয়া বাস্তবতাবিরোধী ছিল, তাই রাসুল (সা.) আজান দেননি।