নারকেলের ব্যবহার: ভারতের দক্ষিণ প্রান্তের জনগণ তাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা এবং রূপচর্চার উপাদান হিসেবে প্রচুর পরিমাণে নারকেল ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া নিয়মিত নারকেলের পানি পান তাদের উজ্জ্বল ত্বকের অন্যতম কারণ। নারকেলে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যতন্তু, ভিটামিন, পুষ্টি উপাদান এবং খনিজ পদার্থ থাকে যা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সুন্দর ত্বক গঠনে বিশেষ সহায়ক। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য যেমন- চাটনি, নারকেল ভাত, আচার তৈরিতে দক্ষিণ ভারতীয়রা প্রচুর পরিমাণে নারকেল ব্যবহার করে থাকে। তাদের রান্না করার তেল হিসেবে মূলত নারকেলের তেল ব্যবহৃত হয়। নারকেল খাদ্য হিসেবে আপনার পছন্দ না হলে, স্বাস্থ্য গঠন এবং সুন্দর ত্বকের জন্য ফল হিসেবে আপনি নারকেল গ্রহণ করতে পারেন।
সৌন্দর্য বৃদ্ধির ১০টি সেরা টিপস।
যোগব্যায়াম: দক্ষিণ ভারতীয় নারীরা মূলত তাদের সুন্দর বাঁকওয়ালা শরীরের জন্য বিশেষ পরিচিত এবং তাদের এই সুন্দর শরীরের মূল রহস্য হচ্ছে, যোগব্যায়াম বা ইয়োগা। যোগব্যায়াম এমনি এক শক্তিশালী শরীরচর্চার মাধ্যম যা মনকে শান্ত করে এবং স্নায়ুগুলোকে শীতল করে তোলে। এ কারণে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে সুন্দর উজ্জ্বল ত্বক, শান্ত মানসিকতা এবং সুঠাম স্বাস্থ্য গড়ে তোলা সম্ভব। যোগব্যায়াম হজমশক্তি বাড়ায়, বার্ধক্যজনিত সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে, মুখে ব্রণ হতে দেয় না এবং আরো বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দূর করে।
আয়ুর্বেদ: দক্ষিণ ভারতীয় রূপচর্চায় বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক প্রসাধনীর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারত নয়, সমগ্র ভারতসহ সারা বিশ্বেই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী নানা উপকারী দিকের জন্য বিখ্যাত। আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী মূলত সুস্থ, উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত ত্বক গঠনে সাহায্য করে ত্বকের কোনোরকম ক্ষতি ছাড়াই।
ম্যাসাজ: দক্ষিণ ভারতীয় নানান ম্যাসাজ থেরাপি শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতেই নয় বরং সমগ্র ভারত এমনকি সারা বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন দক্ষিণ ভারতীয় ম্যাসাজ প্রচুর স্বাস্থ্যগুণ সমৃদ্ধ এবং এগুলো শুধুমাত্র আপনার ত্বক এবং চুল নয় বরং সমস্ত শরীরকেই পরিশুদ্ধ করে তোলে। আপনি বাড়িতেই নিজের মতো বিভিন্ন ম্যাসাজ প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। যেমন রাতে ঘুমানোর আগে আলতো করে সারা দেহে নারকেল তেল ম্যাসাজ করে ঘুমিয়ে পড়ুন। এর ফলে আপনার শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার ত্বক হবে নরম, প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল।
চোখের সৌন্দর্য চর্চা: দক্ষিণ ভারতীয় নারীরা যদিও ঘন কালো সুন্দর চোখের অধিকারী, তারপরও তারা চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য কাজল ব্যবহার করে থাকে। উজ্জ্বল সুন্দর চোখের জন্য তারা চোখের নিচের পাতায় তিলের তেল ব্যবহার করে।
সৌন্দর্য বৃদ্ধির ১০টি সেরা টিপস।
অ্যারোমা থেরাপি ফেসিয়াল: রূপচর্চায় দক্ষিণ ভারতীয় সুন্দরীদের দৈনন্দিন অপরিহার্য রুটিনের মধ্যে রয়েছে, ঘরোয়া ফেসিয়াল। যেকোনো অ্যারোমা তেল বা সুগন্ধি তেল ত্বকের মৃতকোষ দূর করা, ত্বক পরিষ্কার, হাইড্রেট এবং ত্বক প্রশান্ত রাখে। এসব ঘরোয়া ফেসিয়াল শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যই বাড়ায় না বরং স্নায়ুবিক সুস্থতা বাড়ায় এবং ত্বকের নানা সমস্যা ভেতর থেকে দূর করে। যার ফলে ত্বক থেকে ময়লা দুর হয়, ত্বকের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়, ত্বকের ঝুলে পড়া রোধ করে এবং উজ্জ্বল প্রাণবন্ত ত্বক গঠনে সাহায্য করে।
নিয়মানুবর্তী জীবনযাপন: ভালো স্বাস্থ্যের মূল ভিত্তি হচ্ছে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। নিয়মিত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা, পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ, মূলত এগুলোই হল স্বাস্থ্যবান এবং সুন্দর চেহারার গোপন রহস্য। এই নিয়মানুবর্তিতা শুধু যে বাহ্যিক সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে তা নয় বরং অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যও বাড়ায়।
চুলের যত্ন: দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ নারী প্রাকৃতিক ও ঘন কালো চুলের অধিকারী। আপনি যদি আপনার চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে চান তাহলে আপনাকে একটি রুটিনের আওতায় আসতে হবে এবং তা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। চুলের ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করুন। প্রতিদিন পানি দিয়ে চুল ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন এবং সপ্তাহে কেবল দুইদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ব্রাহ্মী এবং আমলকীর নির্যাসসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক উপাদানের মৃদু প্রকৃতির শ্যাম্পু ব্যবহার করুন এবং কেমিক্যালসমৃদ্ধ শ্যাম্পু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
চুলের সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া পদ্ধতি: অনেকেই তাদের অনুজ্জ্বল চুল নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। আপনি আপনার রান্নাঘরের দিকে তাকালেই এই সমস্যার একাধিক সমাধান পাবেন। অর্থাৎ এমন কিছু উপাদানের সন্ধান পাবেন যা আপনাকে দেবে সুন্দর, ঝকঝকে এক রাশ ঘন কালো চুল। খুবই সহজ কিছু উপায় হল- কিছু পরিমাণ দই নিয়ে আপনার চুলে লাগান এবং কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দিন ওভাবেই। এর ফলে আপনার চুল হবে ঘন এবং উজ্জ্বল। লেবুর রস দিয়ে চুলের ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এর ফলে চুলের ত্বকের ময়লা পরিষ্কার হবে এবং খুশকি দূর হবে।
প্রচুর পানি পান: আপনার সুস্থ দেহ, সুন্দর চেহারা ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন। আপনার দেহের পরিশুদ্ধতা, দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থের পরিপূর্ণ নিষ্কাশন, উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত ত্বকের জন্য বিশুদ্ধ পানি পান অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতেও বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই।